গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ইউনিভার্সিটি কলেজকে মাননীয় উচ্চ আদালতের নির্দেশ, কলেজ কর্তৃপক্ষের গড়িমসি।
নিজস্ব প্রতিবেদনঃ
চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ইউনিভার্সিটি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক(অনা.) জনাব শিব প্রসাদ নাথ কলেজ কর্তৃপক্ষের অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি।
একজন প্রকৃত শিক্ষক কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন না। শিক্ষক নামের কিছু কলঙ্কিত ব্যক্তির কাছে সৎ নিষ্ঠাবান ও স্পষ্টবাদী প্রকৃত শিক্ষক কখনো কখনো অবমূল্যায়িত হলেও প্রকৃতপক্ষে সত্য প্রকাশের মাধ্যমে তা বেশিদিন চাপা থাকে না।

গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ইউনিভার্সিটি কলেজে এমনই একজন শিক্ষক জনাব শিব প্রসাদ নাথ। কলেজটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকের কাছে একজন জনপ্রিয় শিক্ষক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে কলেজে পাঠদান পরিচালনা করে আসছিলেন।
১৯৯৯ সনে কলেজটি ডিগ্রী কোড ভুক্ত না হলেও ইতিহাস বিভাগে অবৈধ ভাবে দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত জনাব, মোহেব্বুল্লাহ খান তার নিয়োগ লগ্ন থেকেই বিভিন্ন রকম জাল জাতিয়াতি ও নিয়ম বহির্ভূত কর্মকাণ্ড করে আসছিলেন। এই প্রক্তিয়ার মাধ্যমেই তিনি ইন্টারমিডিয়েট কলেজে উপাধ্যক্ষের পদ না থাকা সত্ত্বেও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে স্বাক্ষাতকার পরিক্ষার জাল নম্বরপত্র তৈরী করে কলেজ সভাপতির সহযোগিতায় উপাধ্যক্ষ হিসেবে উক্ত কলেজে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে এমপিওভুক্ত হন।
কলেজটি ডিগ্রী কলেজ না হলেও উক্ত মোহেব্বুল্লাহ খান, ভুয়া ডিগ্রী কলেজের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে সাবেক মহামান্য রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিন আহমেদের ১০% কোটায় প্রতারণা মূলক জাল কাগজপত্র সৃজন করে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ২০০৬ সনে চাঁদপুর সরকারি কলেজে যোগদান করেন। তবে তিনি এই কলেজেরই গভর্নিংবডির একজন সদস্য থেকে তার নোংরা কাজ গুলো অব্যাহত রাখেন । যেহেতু গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ইউনিভার্সিটি কলেজটিতে বিভিন্ন খাতের আয় আছে বিধায় এটি একটি সম্পূর্ণ লাভ জনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। এই লোভেই উক্ত মোহেব্বুল্লা খান সরকারি কলেজের শিক্ষক হয়েও বেসরকারি কলেজে একজন অধ্যক্ষ হিসেবে কলেজ থেকে প্রতি মাসে বেতন হিসেবে মোটা অংকের টাকা গ্রহন করার বিনিময়ে ২০১৪ সনের ১লা অক্টোবরে উক্ত কলেজে আবার যোগাদান করেন।
এর পূর্বে তিনি পরিকল্পিত ভাবে ভার প্রাপ্ত অধ্যক্ষ জনাব দেলোয়ার হোসেন(ভূগোল) ও গভর্নিংবডির সদস্যের সাথে যোগসাজশে স্পষ্টবাদী ও অবৈধ কাজের বিরোধিতাকারী কয়েক জন শিক্ষককে চাকরীচ্যুত করে তার অবৈধ কাজের পথকে পরিস্কার করার ব্যবস্থা করেন । এর ফলশ্রুতিতে জনাব, শিব প্রসাদ নাথকে বিনা অপরাধে, বিনা নোটিশে কোন কারন না দেখিয়ে কলেজ থেকে প্রথমত ২৪/০৮/২০১৩ ইং তারিখে সাময়িক ভাবে অব্যাহতি দেয়ার ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে তিনি কলেজে যোগদান করে অবৈধ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে অসত্য প্রতিবেদন লিখিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জনাব শিব প্রসাদ নাথকে গত ২৯/১১/২০১৭ তারিখে স্থায়ী ভাবে অব্যাহতি দেন। যা ছিলো সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনিয়মতান্ত্রিক।
জনাব, শিব প্রসাদ নাথ উপায়ন্তর না দেখে মাননীয় উচ্চ-আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন, যার নং- ৮৯৯৬/২০১৮।
দীর্ঘ শুনানি শেষে মাননীয় উচ্চ-আদালত গত ০৮/০১/২০২০ ইং তারিখে এই মামলার রায় ঘোষণা করেন এবং রায়ে জনাব, শিব প্রসাদ নাথ এর বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষের নেয়া সবগুলো পদক্ষেপ অবৈধ ও নিয়মবহির্ভূত ঘোষণা করেন এবং ওনাকে তার পূর্ব পদে চাকরী চলমান রেখে পূর্বের ন্যায় স্বাভাবিক ভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে তাকে তার বিগত দিনের প্রাপ্য সবধরনের বেতন ভাতা তৎক্ষণাৎ দিয়ে দেওয়ার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন।
মাননীয় উচ্চ আদালতের এই রায় এর আলোকে জনাব, শিব প্রসাদ নাথ গত ১১/০১/২০২০ইং ও ১৮/০৩/২০২০ইং তারিখে কলেজ অধ্যক্ষের মাধ্যমে কলেজ সভাপতির বরাবরে দুইখানা আবেদন পত্র জমা দেন। কিন্তু দীর্ঘ ৫ মাস পার হয়ে গেলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ মাননীয় উচ্চ-আদালতের রায় বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। যা মাননীয় উচ্চ-আদালতের আদেশ এর চরম অবমাননা।
জানা যায় যে, কলেজ গভর্নিংবডিতে একজন যুগ্মসচিব জনাব, আয়াত উল্যা মজুমদার, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র এডভোকেট জনাব, আলহাজ্ব আব্বাস উদ্দিন, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও সাহেবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি জনাব, রফিক উল্যা চৌধুরী, ভাটেরহদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি জনাব, হাজী আব্দুল আহাদ, চাঁদপুর পৌরসভার সচিব জনাব আবুল কালাম ভূইয়া ও ১৬ নং রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল মতিন পাটওয়ারীর ছেলে জনাব খোরশেদ আলম পাটোয়ারী সহ আরো কয়েকজন উচ্চপদস্থ ও শিক্ষিত ব্যাক্তিগণ কিভাবে একজন নিরপরাধ ও জনপ্রিয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মতান্ত্রিকতার আশ্রয় নিলেন যাহা মাননীয় উচ্চ আদালতে অবৈধ প্রমাণিত হওয়ায় গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ইউনিভার্সিটি কলেজটি সারাজীবন কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিয়ে কালের সাক্ষী হয়ে থাকতে হবে। তবে সাথে সাথে দূর্ণীতি ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরোধ্যে প্রতিবাদী একজন নিরপরাধ শিক্ষকের নৈতিকতারও জয় হয়েছে।
অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক তদন্তে প্রমাণিত একজন দূর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ মোহেব্বুলাহ খানকে কোন রহস্যজনক কারনে উক্ত কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে বসিয়ে রেখে প্রতিমাসে মোটা অংকের বেতন এবং যাবতীয় অন্যান্য বাড়তি সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তা ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর কাছে রহস্যজনক থেকে গেলো।
তবে সবাই আশাবাদী কলেজ কর্তৃপক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। কারন মাননীয় উচ্চ-আদালতের আদেশের অবমাননা করার কোন সুযোগ নেই, এটি না মানা জঘন্য অপরাধ ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। তবে আইন সবার জন্য সমান,আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে। রাষ্ট্রের প্রতিটি ব্যাক্তিকে সাংবিধানিক অধিকার দেওয়া হয়েছে তাকে রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য। জনাব শিব প্রসাদ নাথ এর ক্ষেত্রেও এর কোন বিকল্প নেই।
